আবদুল গফুর হালী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের দিকপাল,আজ মহান ২১ শে ডিসেম্বর রোজ শনিবার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কৃতি সন্তান,কিংবদন্তী গীতিকার ও সুরকার অসংখ্য মুরশেদী,মাইজভান্ডারি ও বিচ্ছেদী কালামের দীকপাল,২ হাজারেরও অধিক গানের রচয়িতা,সুরকার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মরমী কবি,গোলামে মাইজভান্ডারি,শ্রদ্ধেয় আবদুল গফুর হালী মাইজভান্ডারির ৮ম তম মহাপ্রয়ান দিবস আজ। ২০১০ সালে তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র মেঠোপথের গান।
হালী নিজের রচিত অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। এছাড়াও রচনা করেছেন একাধিক আঞ্চলিক নাটক। আস্কর আলী পণ্ডিতের ভাবশিষ্য হালী যদিও নাটক রচনা ও সুর সৃষ্টি করেন। তার গান নিয়ে দুটি গ্রন্থ তত্ত্ববিধি ও জ্ঞানজ্যোতি।
আবদুল গফুর হালী ১৯২৮ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদে জন্ম নেন। তার পিতা আবদুস সোবহান এবং মাতা গুলতাজ খাতুন। রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চন্দনাইশের জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত একাডেমিক শিক্ষা অর্জনের পর ইস্তফা দেন।
আবদুল গফুর হালীর লেখা অন্যতম গান মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য-
# সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা,
# রসিক তেল কাজলা কোন অই লাল কোর্তা অলা,
# মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে,
# তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু মাছ মারিবার লাই,
# অ শ্যাম রেঙ্গুম ন যাইও,
# ঢোল বাজের আর মাইক বাজের,
# বানুরে অ বানু আঁই যাইয়ুম গই চাটগাঁ
শরত তোঁয়ার লাই আইন্যম কী,
কিংবা মাইজভান্ডারী গান- দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে, কতো খেলা জানরে মাওলা, মাইজভাণ্ডারে কি ধন আছে এবং মোহছেন আউলিয়া গান- চল যাই জিয়ারতে মোহছেন আউলিয়ার দরবারে, আল্লাহর ফকির মরে যদি।
তিনি ছয়টি আঞ্চলিক নাটক রচনা করেছেন। এর মধ্যে গুলবাহার গীতিনাট্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চায়িত ও বেতার-টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। নাটকটিতে আস্কর আলী পণ্ডিতের কালজয়ী গান ডালেতে লড়িচড়ি বৈও চাতকি ময়নারে সহ অন্যান্য গান অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি আজব সুন্দরী নামেও একটি নাটক রচনা করেছেন। তাঁর আঞ্চলিক নাটকগুলো হল: গুলবাহার,নীলমণি,কুশল্যা,পাহাড়,চাটগাঁইয়া,সুন্দরী
সতী মায়মুনা,আশেক বন্ধু।
জার্মানির হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবর্ষ বিষয়ক দর্শন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক হানস হারডার (বর্তমানে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) ১৯৮৯ সালের দিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। পরে শিল্পী কল্যাণী ঘোষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে। তাঁর জীবন ও গান নিয়ে ২০০৪ ডার ফেরুকটে গফুর, স্প্রিখট (পাগলা গফুর, বলে) নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে হালীর ৭৬টি গান অন্তর্ভুক্ত হয়। এগুলোকে আবদুল গফুর হালী রচিত পূর্ববাংলার মরমি গান বলে উল্লেখ করেছেন হানস হারডার। তিনি আবদুল গফুর হালী সম্পর্কে লেখেন, ‘আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি বা উপাধি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় তিনি অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছেন।
২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর এই মহান কালজয়ী মরমী কবি ও শিল্পি মৃত্যুবরণ করেন।
আজকের এইদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
(সৌজন্যে-ধ্রুব আহসান)