চট্টগ্রাম জেলার কাঞ্চনাবাদের কৃতীসন্তান, বিশিষ্ট লেখক, পরিব্রাজক, সুফিবাদী দর্শনের প্রচারক এবং সমাজসেবক আবদুর রহিম একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ। বর্নাঢ্য এ জীবনে তিনি তাঁর জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি আল ইরফান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং তার লেখালেখির মাধ্যমে সমাজে আলোকিত ভাবনা ও পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট। একজন সফল ব্যবসায়ী, দক্ষ ব্যবস্থাপক, এবং প্রতিভাবান লেখক হিসেবে তার যাত্রা দেশের অনেক মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।
জন্ম ও শৈশব: লেখক আবদুর রহিম ১৯৭২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার উত্তর কাঞ্চননগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফজল আহমদ এবং মা সোনাজান বিবি। শৈশবে তিনি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন, কারণ তার পিতাকে শৈশবকালেই হারান। তবে, তার মা ছিলেন অত্যন্ত প্রেরণাদায়ী এবং কঠোর পরিশ্রমী, যার কারণে তিনি ছেলেকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সক্ষম হন। আবদুর রহিমের মা তাকে শুধুমাত্র শিক্ষা দেননি, বরং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি সচেতন করেছেন।
শিক্ষা জীবন: শিক্ষাজীবন শুরু হয় উত্তর কাঞ্চননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর, মুজাফফরাবাদ এন. জে উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায় শেষ করে, পটিয়া সরকারি কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে বিবিএ (মার্কেটিং) এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং তার প্রবন্ধগুলি বিভিন্ন বিষয়কেই অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যেমন ব্যবসায় উদ্যোগ, অর্থনীতি, সমকালীন ইস্যু এবং ভ্রমণকাহিনী।
লেখালেখি ও কর্মজীবন: লেখক আবদুর রহিমের লেখালেখির শুরু কলেজ জীবন থেকেই। তিনি ২০০টিরও বেশি প্রবন্ধ লিখেছেন যা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখার মাধ্যমে তিনি মানুষকে সচেতন যেমন করেছেন, তেমনি শিক্ষিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং আলোকিত সমাজ গঠনের জন্য নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক কাজের পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় চেতনা, সুফিবাদী দর্শন এবং মানবতার কল্যাণে প্রভূত অবদান রেখেছেন। তার ভ্রমণ কাহিনী ও ধর্মীয় বিষয়ে লেখালেখিতে উম্মতে মোহাম্মদীর ঈমান আকিদা রক্ষায় সচেনতার দিকনির্দেশনা এক অনন্যতার মাত্রা দেখা যায়। এছাড়াও, তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডায়মন্ড সিমেন্ট লি.-এর বিক্রয় ও বিপনন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত থাকার সময় দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তাকে নানা সংস্কৃতি এবং জীবনধারার সাথে পরিচিত করিয়েছে, যা তার লেখালেখি এবং চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলেছে। তাঁর অন্যতম প্রকাশিত গ্রন্থ টোকিও হতে ইস্তানবুল – পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা: আব্দুর রহিম একজন পরিব্রাজকও বটে, যিনি সৌদি আরব, চীন, জাপান, মিয়ানমার, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। এসব দেশের সভা, সেমিনার এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ উন্নয়ন ও মানবাধিকার বিষয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা গ্রহণ করেছেন এবং সেই অভিজ্ঞতাকে সমাজে কাজে লাগিয়েছেন। তার বিদেশ সফর এবং আন্তর্জাতিক কর্মশালাগুলির মাধ্যমে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাধারা আরো প্রসারিত হয়েছে, যা তাকে একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অবদান: লেখক আবদুর রহিম সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত থেকে সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দেশব্যাপী সুফিবাদী বিশ্বাসের প্রচার করেছেন। তার লেখনির মধ্যে, তিনি একদিকে যেমন সমকালীন সমাজের সমস্যাগুলি তুলে ধরেছেন, তেমনি অন্যদিকে ইসলামের প্রকৃত শান্তির বার্তা এবং মানবতার প্রতি ভালবাসা প্রচারের চেষ্টা করেছেন।তিনি চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি, পাশাপাশি বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাথেও যুক্ত রয়েছেন। তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ড তাকে সম্মানজনক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তার কাজের মাধ্যমে সমাজে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
পারিবারিক জীবন: লেখক আবদুর রহিমের সংসার জীবনও সফল। তিনি ইছমত আরা চৌধুরীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন, যিনি একজন শিক্ষিত ও সমাজ সচেতন মহিলা। তাদের পরিবারে তিন ছেলে—সাদ, জিসান, ও নাবিল। তারা চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করছেন এবং লেখক তার পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি সাদামাটা, কিন্তু সুখী জীবনযাপন করছেন।
লেখক আবদুর রহিম তার জীবনদর্শন, চিন্তাভাবনা এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট। তিনি শুধু একজন লেখক ও পরিব্রাজকই নন, বরং একজন সমাজসেবক, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং বিশ্বস্ত ভ্রমণকর্মী। তার জীবনযাত্রা এবং কাজের মাধ্যমে তিনি একটি আলোকিত সমাজ গঠনের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করছেন এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
–
লেখক : সোহেল ফখরুদ-দীন, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।