নিজস্ব প্রতিবেদক
আকাশের সূর্যের যখন ভাঙ্গেনি ঘুম, বিলাইনি দিনের আভাঁ। আড়মোড়া ভেঙে সবে বিদায় নিতে শুরু করেছে কুয়াশারা। শীতল বাতাস কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জল ছুঁয়ে উঠে আসছে হ্রদের কোল ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা রাঙামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এর মধ্যেই অভিভাবকদের হাত ধরে শহীদ মিনারের দিকে ছুটছিল শিশু কিশোররা। আজ তাদের লেখা ও আঁকার দিন।
গত ১৮ বছর ধরে একুশের সকালে বর্ণলিখন-চিত্রাংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে রাঙামাটির প্রথিতযশা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজ। সঙ্গে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ডিবেট ফাউন্ডেশন, কালেরকন্ঠ শুভসংঘ এবং আবৃত্তি সংগঠন আফ্রোদিতি। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সকালবেলা রাঙামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় রাঙামাটির বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন অথবা প্রাণের শহীদ মিনারকে। এবছর সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক সংবাদকর্মী ফজলে এলাহী বলেন, ২০০৪ সালে রাঙামাটির শিশু কিশোরদের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য আমাদের স্কুলবেলা পত্রিকার মধ্য দিয়ে এই প্রতিযোগিতা শুরু করি। গত ১৮ বছর ধরে আমরা এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে আসছি। আমরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য কোন বিদ্যালয়ে কোনপ্রকার নোটিশ পাঠাই না। স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং চিত্রাংকনের বিষয় জানিয়ে শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা প্রচার করে থাকি। এটি এখন রাঙামাটির সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গেছে। একুশের চেতনার সাথে রাঙামটির শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করার এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা চেষ্টা করি অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যাক বাচ্চাদের পুরস্কৃত করতে।
প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাঙামাটি সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রেজাউল করিম রেজা ও চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক মো. ইব্রাহিম। তারা আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রাঙামাটিতে এখন শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিল্পচর্চার অভ্যেস অনেকটাই কমে গিয়েছে। এই প্রতিযোগিতা তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটাতে এবং দেশের ইতিহাসকে জানতে ভ‚মিকা রাখবে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ফারিয়া তাবাসসুম বলেন, আমি গত চার বছর যাবৎ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছি। আমরা যারা চিত্রাংকন করি তারা সারাবছর অপেক্ষা করে থাকি আজকের দিনটির জন্য। এখানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আরেক ক্ষুদে অংশগ্রহণকারি তখন একমনে শহীদ মিনারের মাঝের সূর্যটিকে লাল রঙে রাঙাচ্ছিল। কাছে গিয়ে কেমন লাগছে জানতে চাওয়াতে লাজুক হেসে বললো, খুব ভালো লাগছে।
গ্লোবাল ভিলেজের পরিচালক হেফাজত সবুজ বলেন, প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করতে আমাদের অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে আমরা সকল বাধাকে জয় করে এখনো আয়োজন করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আমরা যদি নাও থাকি তবুও এই অনুষ্ঠান চলমান থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ডিবেট ফাউন্ডেশনের সদস্য তুষার ধর প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, শিশু-কিশোরদের সুন্দর মেধা ও মননের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই ধরণের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। আমি বিশ্বাস করি যে একুশের এই চেতনা যদি আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি তবে অসাম্প্রদায়িক যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি তা বাস্তবে রুপ দেয়া সম্ভব হবে।