
রাঙ্গামাটিতে বিরামহীন বৃষ্টি,পাহাড় ধ্বসের ঝুকিতে হাজারো মানুষ,জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বসতবাড়ী ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটির মানুষের জনজীবনে ভোগান্তি নেমে এসেছে। বৃষ্টির ফলে পুরো রাঙ্গামাটি জুড়ে পাহাড় ধ্বসের আশংকা ক্রমে বেড়ে চলছে। সরকারী হিসাব মতে বন্যায় প্লাবন ও পাহাড় ধ্বসে রাঙ্গামাটির প্রায় ২ হাজারের বেশী বাড়ীঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জুড়াছড়ি ও কাউখালী দূই উপজেলার সংযোগ
সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকায় বসবাসরতরা চরম বিপাকে পড়েছে।
তবে এলজিইডি’র অধীনে নির্মিত জুরাছড়ির যক্ষা বাজার ও কাউখালী-ঘিলাছড়ি সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন। বর্তমানে এই দুইটি সড়ক দিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া কাউখালী উপজেলার কাউখালী খাল এবং ইছামতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। প্রবল বৃষ্টিতে ওই উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতর পানি প্রবেশ করেছে।
প্রবল বৃষ্টিতে জুরাছড়ি উপজেলার যক্ষা বাজারে গতকাল সোমবার দুপুরে সড়ক ধ্বসে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ধসে পড়ায় উপজেলা সদরের সাথে ওই এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া যক্ষাবাজার পানিতে তলিয়ে গেছে।
ভারী বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে পাহাড়ি ঢলে জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামুরাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। ৬দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জুরাছড়ির জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, প্রবল বর্ষণে সড়ক বিভাগের প্রায় ১৫টি পয়েন্টে পাহাড়ধসে সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবেই সবগুলো পয়েন্ট মাটি সরিয়ে নেয়ার কাজ করেছে সড়ক বিভাগ। সব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
রাঙামাটি প্রশাসনের তথ্য অনুযাযী, জেলায় মোট ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছে ৬৭২ জন। টানা বর্ষণে এই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩টি বসত। যা আরো বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬২৮০ হেক্টর জমি। জেলায় ৫৪০ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমালের কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেজন্য প্রশাসন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাচালং নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাঘাইছড়ি উপজেলায় টানা বর্ষণে বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড পূর্ব লাইল্যাঘোনা গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি ও রাস্তা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের এফ ব্লক এলাকার সংযোগ সড়ক প্লাবিত ও মধ্যমপাড়া থেকে কাচালং কলেজ সড়কসহ আরো কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌরসভার প্রায় ৮টি ওয়ার্ডই কম-বেশী বন্যার পানিতে প্লাবিত। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সব কৃষিজমি ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আখতার বলেন, উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আপাতত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিরামহীন বৃষ্টির ফলে ক্রমে পানির পরিমাণ আরো বাড়ছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার, বাঘাইছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুপ্তশ্রী সাহা।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসন দিনরাত করছে। প্রশাসন থেকে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার থেকে ৫৪০ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সে বিষয়েও আমাদের প্রস্তুতি আছে। উপজেলা নির্বাহী আফিসারদের দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক তার কাজ করে যাচ্ছেন।
টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি সাথে সাথে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। ##