২৫ বছরে ঢাকায় বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাবলেট ভাড়াটিয়ার সংখ্যা। ভাড়াটিয়া পরিষদের এক হিসেব বলছে রাজধানীর ভাড়াটিয়াদের ২০-২৫ শতাংশ এখন বসবাস করছেন সাবলেটে।
আয়েশা আক্তার, স্বামী সন্তানসহ তিন সদস্যের এই সংসারে চিন্তার ভাজ ফেলেছে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি আর বাড়ি ভাড়া। তাই কিছুটা নির্ভার থাকতে ঠাই নিয়েছেন সাবলেটে।
আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর যদি রোজগার ২০ হাজার টাকা হয় তাহলেতো ১০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব নয়। কারণ বাকি ১০ হাজারেতো পুরো সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়েই সাবলেটে থাকতে হয়।’
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় মাসিক ১৭ হাজার টাকায় তিন রুমের একটি ৭০০ বর্গফুটের বাসা ভাড়া নিয়েছেন ওসমান গণি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন হলেও ব্যবহার করছেন দুটি রুম। আর একটি রুম সাবলেট দিয়েছেন পাচ হাজার টাকায়।
ওসমান গণি বলেন, ‘আগে বাসা ভাড়া সহ সব পণ্যে দাম কম ছিলো, কিন্তু এখন সব জিনিসের দাম বেশি। সন্তানরাও বড় হয়েছে, খরচ আগের থেকে বহুগুণ বেড়েছে। তাই একটা বাসা পুরোটা নিজের পক্ষে ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাইতো সাবলেট দিয়েছি।’
একই অবস্থা মো. শাহজাহানেরও। সাংসারিক খরচ সামলাতে হিমশিম খেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি রুম সাবলেট দেয়ার। তাই দেয়ালে দেয়ালে সেটে দিচ্ছেন সাবলেটের পোস্টার।
মো. শাহজাহান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় বর্তমানে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। জীবনযাপনে খুবই কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে বেড়েছে সংসারের খরচও। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে ভাঙতে হচ্ছে সঞ্চয়ও। নগরীর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের যেন চিটে চ্যাপ্টা অবস্থা।
মূলত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবি, ঢাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করেন, মাসিক আয় ১৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে। সাবলেটে তাদের চাহিদাই বেশি।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ।
সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ ও ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া পরিশোধে।
ভাড়াটিয়া পরিষদের হিসাব মতে, রাজধানীতে ভাড়া থাকেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩৬ লাখ। যার মধ্যে খরচে বাড়তি চাপ সামাল দিতে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ থাকছেন সাবলেটে।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘অনেক শ্রমিকদের বেতন ১০ হাজার থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দিয়েছে অনেক কারখানা। এইসব শ্রমিকদেরতো বাসা ভাড়া দেয়া ক্ষমতা নেই। তাইতো দুই তিন পরিবার মিলে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছেন।’
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, খিলগাও, মুগদা, বাসাবো, মৌচাক, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা এলাকায় সাবলেট ভাড়াটিয়া বেশী থাকলেও তুলনামূলক সাবলেট ভাড়াটিয়া কম ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী, মোহম্মদপুর, ওয়ারীসহ পুরানো ঢাকায়।